৩৩৬৮। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তা'আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে তার মাঝে রূহ (আত্মা) সঞ্চার করেন সে সময় তার হাঁচি আসে এবং তিনি আলহামদুলিল্লাহ' বলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার অনুমতি নিয়েই তার প্রশংসা করেন। তারপর তার উদ্দেশে আল্লাহ তা'আলা “ইয়ারহামুকাল্লাহ" (তোমার উপর আল্লাহ তা'আলা সদয় হোন) বলেন এবং আরো বলেনঃ হে আদম! তুমি ঐসব ফেরেশতার নিকট যাও যারা সমবেত অবস্থায় ওখানে বসে আছে।
অতঃপর তিনি গিয়ে আস-সালামুআলাইকুম' বললেন। ফেরেশতাগণ জবাবে 'ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ বললেন। তারপর তিনি তার প্রভুর নিকট এলে তিনি বললেনঃ এটাই তোমার ও তোমার সন্তানদের পারস্পরিক অভিবাদন। এবার আল্লাহ তা'আলা তার দুটি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তাকে বললেনঃ দু'টি হাতের মাঝে যেটি ইচ্ছা বেছে নাও। তিনি বললেনঃ আমার রবের ডান হাত আমি বেছে নিলাম। আর আমার রবের প্রত্যেক হাতই ডান হাত এবং বারাকাতময়, অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তার মুষ্টিবদ্ধ হাত খুললে দেখা গেল যে, তাতে আদম (আঃ) এবং তার সন্তানরা রয়েছে।
আদম (আঃ) বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা! এরা কারা? আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ এরা তোমার বংশধর। তাদের সকলের দুই চক্ষুর মধ্যখানে তাদের আয়ুষ্কাল লেখা ছিল। তাদের মাঝে একজন অত্যুজ্জ্বল চেহারার ছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! কে এই লোক? তিনি বলেনঃ সে তোমার সন্তান দাউদ (আঃ)। আমি তার চল্লিশ বছর বয়স নির্ধারণ করেছি।
আদম (আঃ) বললেনঃ হে আল্লাহ! তার আয়ুষ্কাল আপনি আরো বাড়িয়ে দিন।তিনি বললেনঃ আমি তার আয়ুষ্কাল এটাই নির্ধারণ করেছি। আদম (আঃ) বললেনঃ হে প্ৰভু! আমার আয়ুষ্কাল হতে ষাট বছর আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ এটা তার প্রতি তোমার বদান্যতা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ তা'আলা যত দিন চাইলেন তিনি জান্নাতে থাকলেন, তারপর তাকে সেখান হতে (পৃথিবীতে) নামানো হল। আদম (আঃ) নিজের বয়সের গণনা করতে থাকলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আদম (আঃ)-এর নিকট মালাকুল মাউত (মৃত্যুদূত) এসে হাযির হলে তিনি তাকে বললেনঃ আমার জন্য ধার্যকৃত বয়স তো হাজার বছর, যথাসময়ের আগেই তুমি এসেছ। মৃত্যুদূত বললেন, হ্যাঁ, তবে আপনি আপনার বয়স হতে ষাট বছর আপনার বংশধর দাউদ (আঃ)-কে দান করেছেন। আদম (আঃ) তা (ভুলে গিয়ে) অস্বীকার করলেন। এজন্য তার সন্তানরাও অস্বীকার করে থাকে। আর তিনি ভুলে গিয়েছিলেন তাই তার সন্তানরাও ভুলে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সেদিন হতেই লিখে রাখা ও সাক্ষী রাখার হুকুম দেয়া হয়।
হাসান সহীহঃ মিশকাত (হাঃ ৪৬৬২), যিলালুল জান্নাহ (হাঃ ২০৪-২০৬)।
আবূ ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সূত্রে হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ)-এর বরাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অন্যসূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। আর ঐ সূত্রে যাইদ ইবনু আসলাম আবূ সালিহ হতে, তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এভাবে উল্লেখ আছে।
১১৭৭-(৯৯/...) কুতায়বাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ..... আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ‘আসরের সালাত আদায় করালেন। কিন্তু দু' রাক’আত আদায় করার পর সালাম ফিরালেন। যুল ইয়াদায়ন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সালাত কি কমিয়ে দেয়া হয়েছে না আপনি ভুল করেছেন? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এসব কিছুই হয়নি (সালাত কমিয়ে দেয়া বা আমার ভুল করা) কিছুই হয়নি। এ কথা শুনে যুল ইয়াদায়ন বলল, হে আল্লাহর রসূল! কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের দিকে ঘুরে বললেনঃ যুল ইয়াদায়ন এর কথা কি ঠিক? সবাই বলল, হ্যাঁ হে আল্লাহর রসূল! তখন রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের অবশিষ্ট অংশ পূর্ণ করলেন এবং সালাম ফিরানোর পর বসে বসেই দুটি সিজদা (সাহু সিজদা) করলেন। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১১৬৬, ইসলামীক সেন্টার, ১১৭৮)
১১৬১-(৮৯/৫৭২) আবূ শায়বার দু' পুত্র আবূ বকর ও উসমান এবং ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ..... আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদিন) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করলেন। বর্ণনাকারী ইবরাহীমের বর্ণনা মতে, এ সালাতে তিনি কিছুই কম বা বেশী করে ফেললেন। সালাম ফিরানোর পর তাকে (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! সালাতের ব্যাপারে কি নতুন কোন হুকুম দেয়া হয়েছে? এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, নতুন হুকুম আবার কেমন? তখন সবাই বললঃ আপনি সালাতে এরূপ করেছেন। এ কথা শুনে তিনি পা দু' খানা ভাজ করে কিবলামুখী হয়ে বসলেন এবং দুটি সিজদা করে তারপর সালাম ফিরালেন। এরপর আমাদের দিকে ঘুরে বললেনঃ সালাতের ব্যাপারে কোন নতুন হুকুম আসলে আমি তোমাদরকে জানতাম। (এটা তেমনি কিছু নয়) বরং আমি তো মানুষ বৈ কিছুই না। তোমাদের যেমন ভুল হয় আমারও তেমন ভুল হয়। সুতরাং আমি যদি কোন কিছু ভুলে যাই তাহলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিও। আর সালাতের মধ্যে তোমাদের কারো কোন সন্দেহ হলে চিন্তা-ভাবনার ভিত্তিতে যেটি সঠিক বলে মনে হবে সেটিই করবে এবং এর উপর ভিত্তি করে সালাত শেষ করবে। অতঃপর দু'টি সিজদা করবে। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১১৫৪, ইসলামীক সেন্টার ১১৬৩)